জাগো নিউজ:
রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধন নিতে চেষ্টা চালাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম ও বাকশাল। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটের রাজনীতিতে অংশ নিতে চায় দল দুটি। এজন্য হেফাজতে ইসলামের একাধিক নেতা ইসিতে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। বসে নেই বাকশালের নেতারাও।

নিবন্ধন পেতে কী করতে হবে এ নিয়ে ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছেন তারা। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) ইসির নিবন্ধন পাওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে। সম্প্রতি দলটির চেয়ারম্যান শরীফ মো. আমীরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বরাবর পাঠানো হয়েছে। আর হেফাজত নেতারা ইসির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করছেন।

বঙ্গবন্ধুর গঠিত রাজনৈতিক দল বাকশাল সিইসির কাছে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করেছে, যে শর্তের উপর ভর করে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন দেয়া হয়, তার প্রথম শর্ত অনুযায়ী বাকশাল নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। কারণ ১৯৮৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে বাকশালের পক্ষ থেকে তিনজন এবং ১৯৯১ সালের নির্বাচনে একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ইতিপূর্বে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হলে প্রথমে বাকশাল নিবন্ধিত হয়। কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় ব্যক্তিগত আক্রোশ ও খামখেয়ালিপনায় পরবর্তীতে সিইসি এ টি এম শামসুল হুদা নিবন্ধন বাতিল করে দেন, যা ছিল নির্বাচন কমিশনের আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

সূত্র জানায়, ভোটের রাজনীতিতে আসার জন্য হেফাজতে ইসলামও ইসিতে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। এসব বিষয়ে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী জাগো নিউজকে বলেন, আমরা এখন ভোটের রাজনীতিতে যেতে চাই। এজন্য ইসিতে যোগাযোগ করছি। আমরা ইসলামের পথে থেকে সরকারকে সহযোগিতা করে দলকে এগিয়ে নিতে চাই। আমাদের আরও অনেক দাবি রয়েছে, সেগুলো আদায় করতে আমরা আরও অগ্রসর হব।

জানা যায়, ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামের শতাধিক কওমি মাদরাসার শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত হয় হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটি ২০১০ সালে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। ২০১১ সালে তারা বাংলাদেশ নারী উন্নয়ন নীতির (২০০৯) কয়েকটি ধারা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক দাবি করে এর তীব্র বিরোধিতা করে। ২০১১ সালে সংগঠনটি সর্বক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে গঠিত নারী উন্নয়ন নীতির তীব্র বিরোধিতা করে।

২০১৩ সালে তারা ইসলাম ও রাসূলের কটূক্তিকারী ব্লগারদের ফাঁসি দাবি করে আন্দোলন ও সমাবেশ শুরু করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে তারা ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করে। হেফাজতে ইসলামের এ দাবির কয়েকটি দফা সমালোচিত হলে পরবর্তীতে তারা সংবাদ সম্মেলন করে এর ব্যাখ্যা দেয়। সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে ভাস্কর্য সরাতে হেফাজতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী একমত পোষণ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনটির রাজনৈতিক গুরুত্ব নতুন উচ্চতা পায় বলে বিশ্লেষকদের অভিযোগ।

নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিষয়ে কমিশনের কোনো উদ্যোগ আছে কিনা- জানতে চাইলে ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, সামনে নির্বাচন। এ কারণে অনেকে নিবন্ধন নিতে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তবে ইসি থেকে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে।

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা জানিয়েছে, বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪০টি। হাইকোর্টের রায়ের ভিত্তিতে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়।